থোকায় থোকায় ‘হাঁড়িভাঙা’ স্বপ্ন দেখছেন কৃষি বিভাগ ও বাগান মালিকরা

হাওর বার্তা ডেস্কঃ রংপুরের মিঠাপুকুর ও বদরগঞ্জসহ আট উপজেলায় থোকায় থোকায় হাঁড়িভাঙা আমের মুকুল ধরেছে। এখন বাতাসে দোল খাচ্ছে হাঁড়িভাঙ্গার গুটি। প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে আম উৎপাদনে অতীতের সকল রেকর্ড ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করছেন ব্যবসায়ী, কৃষি বিভাগ ও বাগান মালিকেরা। সে হিসেবে এবারে শুধুমাত্র রংপুরেই একশ’ ৫ কোটি টাকার আম উৎপাদন সম্ভব বলে জানান স্থানীয় কৃষি বিভাগ।

বাগান মালিকদের অভিযোগ শুধুমাত্র ধান বা অন্যান্য ফসলের ক্ষেত্রে কৃষি বিভাগ তৎপর থাকলেও আমের মতো এই বিশাল সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে মাঠ পর্যায়ে কৃষি বিভাগের কোনো দিক-নির্দেশনা বা তদারকি চোখে পড়ে না। তবে কৃষকদের এ অভিযোগ মানতে নারাজ কৃষি বিভাগের কর্তা ব্যক্তিরা। তারা জানান, কৃষকদের পাশে থেকেই সঠিক পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। যার কারণে হাঁড়িভাঙার বিপ্লব ঘটছে রংপুর অঞ্চলে।

সরজমিন রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার খোড়াগাছ, বালুয়া মাসিমপুর, ময়েনপুর, রাণীপুকুর, ছড়ান, বড়বালা, লতীবপুর ও বদরগঞ্জ উপজেলার কুতুবপুর, গোপালপুর, লোহানীপাড়া, কালুপাড়া, বিষ্ণুপুরসহ রংপুর সদর উপজেলার সদ্যপুষ্করনী ও চন্দনপাঠ ইউনিয়নে গিয়ে দেখা যায় হাঁড়িভাঙা আম চাষের বিপ্লব। এসব এলাকায় এখন বাগান মালিক ও ব্যবসায়ীরা আমের পরিচর্যা করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। আমের গুটি আটকাতে তারা গাছে ছিটাচ্ছে ওষুধ। মিঠাপুকুর ও বদরগঞ্জে এখন যেদিকেই চোখ যায়, সেই দিকেই শুধু হাঁড়িভাঙ্গার বাগান আর বাগান। হাঁড়িভাঙা আমের গুটি দেখে এখন মন কাঁড়ছে পথচারীদের।

রংপুর কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে শুধু রংপুর জেলায় বাগান পর্যায়ে ১ হাজার ৫৫২ হেক্টর এবং বাসাবাড়ি ও ক্ষুদ্র পরিসরে তিন হাজার ১১৪ হেক্টর জমিতে আমের বাগান হয়েছে। রংপুর বিভাগের ৮ জেলায় এই আম বাগানের পরিমাণ প্রায় ৪৫ হাজার ৫০০ হেক্টর। এই পরিমাণ জমিতে প্রায় ৪১ লাখ ৭৪ হাজার গাছ রয়েছে। যা থেকে গড়ে ৫ মণ করে আম উৎপাদনের মাধ্যমে দুই লাখ ২৫ হাজার মণ আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। আর রংপুরের বদরগঞ্জ, মিঠাপুকুর ও সদর উপজেলাসহ আট উপজেলায় এবারে ১৭ হাজার ৫০০ টন আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। আমের ভরা মৌসুমে প্রতিকেজি আম ৬০ টাকা দর হলে যার পরিমাণ দাঁড়ায় একশ’ ৫ কোটি টাকা। তবে কৃষি বিভাগ বলছে প্রাকৃতিক কোনো দুর্যোগ না হলে এ লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে।

বাগান মালিক ও আমের মৌসুমী ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আমের মুকুল আসার আগ মুহূর্ত গুটি হওয়ার সময়ে নানা রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। এতে আম পচে ঝরে পড়ে। এই মুহূর্তে আমের যে কোনো ধরনের পচন রোগ ঠেকাতে ও গুটি নিশ্চিত করতে নিজেদের অভিজ্ঞতা এবং ওষুধ কোম্পানির ওপর ভর করে ছিটানো হচ্ছে ওষুধ। তবে চাষিদের অভিযোগ কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা এখন পর্যন্ত বাগানে বাগানে গিয়ে তাদের সঠিক পরামর্শ দিচ্ছেন না। তবে এ  অভিযোগ অস্বীকার করেছেন কৃষি কর্মকর্তারা। তারা বলছেন, গাছের গোড়ায় সেচ দেয়ার পরামর্শ দিলে এতে চাষিরা রাজি হচ্ছে না। কিন্তু তারা গাছে গাছে আম আটকানোর জন্য নিজেদের সনাতন পদ্ধতিই ব্যবহার করছেন। এতে আমাদের সঙ্গে তাদের মতের মিল হচ্ছে না। এ কারণে তারা অযথাই কৃষি বিভাগকে দোষারোপ করছেন।

হাঁড়িভাঙা আমের মাতৃগাছের জনক মৃত নফল উদ্দিন পাইকারের ছেলে খোড়াগাছা ইউনিয়নের তেকানী গ্রামের আমচাষি আমজাদ হোসেন পাইকার (৫৫) ক্ষোভ প্রকাশ করে উল্টো কথা বলেন। তিনি জানান, ‘এবার বাহে গাছোত স্মরণকালের মুকুল ধরছে। কিন্তু আম আটকানো যাওচে না। আর কৃষি বিভাগের কোনো লোক (বিএস) আসি কোন পরামর্শ দেয় নাই। হামার নিজের অভিজ্ঞতা কাজে নাগেয়া আমের যত্ন করুচি। এখন ঝড়-বৃষ্টিতে আমের যে কি হইবে আগাম বলা যাচ্ছে না।’ মিঠাপুকুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা খোরশেদ আলম বলেন, এবারে শুধুমাত্র মিঠাপুকুরে ১ হাজার হেক্টর জমিতে হাঁড়িভাঙ্গার বাগান করা হয়েছে। প্রতি হেক্টরে ১৩ থেকে ১৫ টন আম উৎপাদন সম্ভব হবে। তিনি বলেন, চাষিদের পাশে থেকেই সঠিক পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। আমের এ বিপুল সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে কৃষি বিভাগ তৎপর রয়েছে।

রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. সরওয়ারুল হক বলেন, ‘এবারে রংপুরে আমের রেকর্ড পরিমাণ মুকুল ধরেছিল। বিশেষ করে হাঁড়িভাঙা আম উৎপাদনে অতীতের রেকর্ড ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করছি। এবারে একশ’ কোটি টাকার উপরে আম উৎপাদন হবে। আমের পরিচর্যা করতে দল গঠন করে দেয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে তারা উঠান বৈঠক করে চাষিদের পরামর্শ দিচ্ছেন এবং পাশে আছেন।’

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর